Wednesday 8 August 2012

আপেল বিলাস


মাথার উপর খড়খড়ে রোদ,সূর্য ঠিক মাথার উপরে। রুমালে কপাল মুছে আসলাম তার সিটের নীচ থেকে পানির বোতল বের করে। ঢক ঢক করে পানি ঢালে গলায়। মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হয়। সিএনজি অটোরিক্সাটা দাড়া করায় মহাখালী ফ্লাইওভার এর নীচে। ইঞ্জিন বন্ধ করে বাইরে বের হয় আসলাম। ভালো করে একটু শ্বাস নেবার চেষ্টা করে,শীশায় ভারি ঢাকার বাতা সেই সুযোগ দিতে চায় না।

চোখ পিট পিট করে তাকায় নিজের সিএনজি এর দিকে,গত ৪ বছর আগের কেনা,ফাতেমার সব সঞ্চয় আর নিজের সব সঞ্চয় ভেঙে কেনা। কেনার পর ঘর ভাড়া বাকি পড়েছিল প্রায় ৫ মাসের,ফাতেমা হাতে পায়ে ধরে ৫ মাস থেকেছে সেই বাড়িতে। ফাতেমার মতো একজন স্ত্রী থাকা আসলে ভাগ্যের ব্যপার,মনে মনে ভাবে আসলাম।

এক রুমের একটা ছাপরা ঘর,একটা সিএনজি, আর গার্মেন্টস কোম্পানিতে ফাতেমার চাকরি এই নিয়েই আসলামের সংসার। সেই কলেজ পড়ার সময় গ্রাম ছেড়েছিল আসলাম,সাথে ছিল ফাতেমা। লঞ্চ থেকে নেমেই সদর ঘাট,শহরে পৌছাতে পৌছাতে হারিয়েছিল ব্যাগ আর টাকা। ফাতিমার বয়সের একটা মেয়ে উড়ে বেড়ায়, বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেয়,জন্মদিন পালন করে,ভার্সিটি যায় এগুলো আসলাম জানে,অনেক সময় দল বেধে মেয়েরা ওঠে আসলামের সিএনজিতে। আসলামের তখন মনে পড়ে নিজের স্ত্রী এর কথা। তবে হ্যাঁ,ফাতিমাকে অনেক রঙের মাঝে না রাখতে পারলেও কখনও পথভ্রস্ট্র হয়নি আসলাম, বস্তির আশে পাশে বাসার অন্য পুরুষের মতো ফাতিমার গায়ে হাত তোলেনি কোনদিন,বেশ্যাপাড়ার দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি। ভালবেসেছে আসলাম সবটুকু দিয়ে।

-সিএনজি যাবা?
- কই?
- টঙ্গি বাজার?
- জি না।
-আরে চল, মিটারের থেকে বেশি দিমু
-না,ভাই। আমার অন্য দিকে যেতে হবে।

প্লানটা ততক্ষনে মাথার মধ্যে গেঁড়ে বসেছে আসলামের। দশ পা হাঁটলেই ফলের দোকান। সেখানে পৌছাল আসলাম।

- ভাই আপেলের কেজি কত?
- কত কেজি লাগবে আপনার?
- খুচরা দুইটা লাগতো।
- খুচরা তো বেচি না,ভাই।
- আরে ভাই দেন না। ফাও তো নিতেছি না।
- আচ্ছা ২০ টাকা দেন।
দুটো আপেল একটা কাগজের ব্যাগে পুরে সিএনজি এর কাছে ফিরে আসে আসলাম। ইঞ্জিন চালু করতেই এক মেয়ে এসে দাঁড়াল
- ভাই যাবেন?
- কোথায়?
- মধ্য বাড্ডা।
-জী যাবো
- কত?
- আপনার যা ইচ্ছা হয় দিয়েন,আপনি তো যান সবসময়।

পাক্কা ড্রাইভারের মতো বড় বড় বাস ট্রাকের ফাঁকা দিয়ে সিএনজি চালিয়ে মহাখালির জ্যাম পার করে আসে আসলাম। ঘণ্টা খানেক পর মেরুল বাড্ডার রাস্তায় চলে আসে আসলাম। সেখানে সিনেমা হলের বড় একটা হোরডিং, জসিম- শাবানার কালিয়া ছবির। জসিমের গোফটা বড্ড ভালো লাগে আসলামের।
মধ্য বাড্ডার রাস্তায় চলে আসে আসলাম। মসজিদের সামনে দাড়াতে বলে মেয়েটা। ব্যাগ থেকে বের করে দেয় একটা ১০০ টাকার নোট আর খুচরা ১০ টাকা।

গাড়ি ঘুরিয়ে মেরুল বাড্ডার রাস্তায় চলে আসে আসলাম,এখন আর কোন খেপ মারবে না সে। গাড়ি পার্ক করে গলির মধ্যে,ওইতো দেখা যায় ফাতেমার গার্মেন্টস। দুপুরের খাবারের সময় দিয়েছে,সব মেয়েরা বের হয়ে আসছে,কারো হাতে বাটি,কারো হাতে ছোট টিফিন ক্যারিয়ার। ফাতেমাও বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসে বাটিতে করে। সিঁড়ি ভেঙে দোতালায় আসে আসলাম,ডান দিকের রুমেই মেয়েরা বসে,ঢুকতেই ফাতেমাকে দেখতে পায় সে। ফাতেমার চোখে অবিশ্বাস দেখতে পায় আসলাম

- আপনি এইখানে কি করেন?
- তোমারে দেখতে আসলাম।
- খেপ নাই আপনার?
- এই দিকেই আসছিলাম,চিন্তা করলাম তোমারে দেইখা যাই,খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল।
কাগজে মোড়ানো আপেল দেয় আসলাম ফাতেমার হাতে।
- খাবার পড়ে খাইয়। আমি তাইলে এখন যাই।
- কই যান আপনি,শেষ মাথায় বাথরুম,হাত ধুয়ে আসেন,ভাত খাবেন।
- ভাত তো একজনের,দুই জন মানুষ কেমনে খামু?
- আপনি যান তো,হাত ধুয়ে আসেন।
হাত ধুয়ে ফিরে এসে আসলাম দেখে,দুই বাটিতে ভাত বেটে বসে আছে ফাতেমা। বিছানো খবরের কাগজ এর উপর বসে আসলাম।
- আগে মাছ দিয়া খান,শেষ হইলে ডাইল নিবেন।
- আচ্ছা।

হাতে ভাত মাখতে থাকে আসলাম,মাছ আর আলুর ঝোল,সাথে একটা কাচা মরিচ,সামনে একটা ছোট কাগজে লবন। আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করে আসলাম। ফাতেমা এটা সেটা জিজ্ঞাসা করে,আসলাম উত্তর দেয়।
- ভাত কই পাইলা ফাতেমা?
- একজনের কাছ থেকে চাইয়া নিছি,অল্প একটু।
প্লেট উঠিয়ে চুমুক দিয়ে ডাল খেয়ে,উঠে পরে আসলাম। হাত ধুয়ে আসে। ফাতেমা তখনও বসে আছে,বড্ড আস্তে আস্তে খায় ফাতেমা।
- আমি গেলাম,নীচে গাড়ি রাইখা আইছি।
- একটা আপেল নেন,দুইটা দিয়া আমি কি করমু?
- তোমার কাম কখন শেষ হইব আজকে?
- ৫ টার সময়।
- আইচ্ছা তাইলে,নীচে দাঁড়াইয়ো তুমি,আমি আসমুনে তোমারে নিতে।
- কেন? আমি তো একলাই বাসায় যাই,আপনার আসার কি দরকার?
- কালিয়া ছবি দেখমু আইজকার আমরা, জসিম –শাবানার। থাইকো নীচে।

সিঁড়ি ভেঙে নীচে নামতে থাকে আসলাম,পিছনে ফিরে তাকায় না একবারও। তাকালে হয়ত আসলাম দেখত,ফাতিমার চোখে চোখে জল,দু ফোটা ভালোবাসার জল।

1 comment:

  1. পছন্দ হয়েছে " দুই ফোঁটা ভালোবাসা " :)

    ReplyDelete