Tuesday 7 August 2012

৭১ এর জেনোসাইড(পাক সেনাবাহিনী)


খাবার পেলে প্রথমেই সবল ঝাঁপিয়ে পড়ে,ছিঁড়ে খুড়ে খায় আর দূর্বল দূরে দাড়িয়ে দেখে। সবলের উদর পূর্ণ হলে সবল ঢেঁকুর তোলে আর দূর্বল মাঠে নামে,এর পর আস্তে আস্তে আসে আরো শক্তিহীনেরা।
মৃত হরিনের বুক খাবলে বাঘ যখন চলে যায় তখন খেকশিয়াল ঝাঁপিয়ে পড়ে,খেকশিয়ালও যখন চলে যায় তখন আসে কাক,চিল,শকুন।
বাংলাদেশ নামক এই ছোট পাখিটার বুক খামচে খেয়েছে শাসকেরা কয়েক দফায়। প্রথমে খেয়েছে আংরেজ সাহেবেরা,এর পর খামচে খেয়েছে পাকিস্তানী শাসক, সেনা আর তাদের দোসরেরা।

বাংলাদেশে যখন সেনা মোতায়ন করা হয় ১৯৭১ সালে,তখন তাদের গনহত্যার আদেশ দিয়েই পাঠানো হয়,এবং সাধারন সৈনিকও বুঝে ফেলে এই মিশনে এবং এর পরবর্তীতে তাদের কোন জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। আর সেই সাথে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে নিরীহ,নিরস্ত্র বাঙালীকে,বিজয় নিশ্চিত ভেবেই হিংস্র ও অমানুষিক হয়ে ওঠে পাক সেনারা।
মাও সে তুং এর একটা বিখ্যাত কথা আছে ” বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস”। ১৯৭১ সালে পাক সেনাদের হাতে ছিল অস্ত্র আর ম্যাসাকারের আদেশ,হাতে অস্ত্র থাকলে মানুষের শরীরে নাকি অদ্ভুত এক ক্ষমতার আবেশ চলে আসে,ব্যতিক্রম হয়নি ১৯৭১ সালেও। সেনারা হাসতে হাসতে আগুন দিয়েছে গ্রামে,বেয়োনেটে গেথেছে শিশুকে,মায়ের কোল থেকে শিশুকে টেনে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে আগুনে।
সারা বাংলাদেশের নারীকে করছে রেপ,শুধু রেপ করেই ক্ষান্ত হয়নি হায়েনার দল,দু পায়ের মাঝে বেয়োনেট ঢুকিয়ে হত্যা করেছে,স্তন কেটে নিয়েছে,খোলা মাঠে নগ্ন নৃত্য করাতে বাধ্য করেছে।
৭১ এর জেনোসাইড নিয়ে লেখা এই পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি তৎকালীন গণহত্যার সাক্ষী কিছু মানুষের বক্তব্য,কিছু বই ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের অংশবিশেষ।

এন্থনি মাসকেরহানস
The rape of Bangladesh
পৃষ্ঠা- ১১৬-১১৭

বাংলাদেশের উপরে চালানো গণহত্যার লক্ষ্য নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। মূলত তারা ছিলেন
১) বাঙালী সৈনিকেরা,যারা কর্মরত ছিলেন সামরিক বাহিনীতে ( ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট),পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে,পুলিশ এবং আধা সামরিক আনসার বাহিনীতে।
২) হিন্দু জনগোষ্ঠী- কিছু কিছু সৈনিকের বক্তব্য ছিল এমন “ আমরা শুধু হিন্দু পুরুষদের হত্যা করছি,নারী এবং শিশুদের মুক্তি দেয়া হবে।“ তাদের ধারনা ছিল একজন নিরীহ ও নিরস্ত্র হিন্দু পুরুষকে হত্যার মধ্যে হয়ত গৌরব রয়েছে।
৩) আওয়ামিলীগার- সকল সমর্থক,কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের সকল নেতা কর্মী ছিল হত্যার লিস্টে।
৪) শিক্ষার্থী- কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র ছাত্রী,এবং আন্দোলনরত কিংবা মিছিল মিটিঙে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থী।
৫) বাঙালী বুদ্ধিজীবী- বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক,প্রফেসর এবং খ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

প্রফেসর হরিধন দাসের নিজের কিছু কথা পাওয়া যায় Genocide in Dhaka University: 1971 বইটিতে। সেখানে তিনি বর্ননা করেছেন পাক সেনাবাহিনীর বীভৎসতার কথা।

প্রফেসর হরিধন দাস
ভিক্টোরিয়া কলেজ,কুমিল্লা।
(Quoted from “Genocide in Dhaka University: 1971, The Jagannath Hall” by Prof Ratanlal Chakraborty, Dept of History, University of Dhaka)

“দরজায় ভারী বুটের আঘাত। হাত মেলানোর পর আমরা একে অন্যের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। যত জোরে সম্ভব আমরা তিনজনে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। এরপর তিনজন ঘরের তিন কোনায় ছড়িয়ে পড়লাম। আমি ছিলাম দরজার পেছনে। ভারী গুলির বর্ষনে দরজা ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেলো। হঠাৎ দুটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হল। খুনিটি বলে উঠলো, “বল জয় বাংলা,বাইনচোদ! শেখ মুজিবর কোথায়?” একটি পেন্সিল টর্চের সাহায্যে ওই ঘাতকগুলো ওদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে নিল। এরপর ওই দানবগুলো পরবর্তী দরজার দিকে পা বাড়াল। তাদের ওই ধ্বংসযজ্ঞ বিরতিহীনভাবে সকাল পর্যন্ত চললো। এরই মধ্যে আমার রুমে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।

গানপাউডারের গন্ধে আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসছিলো। ভাঙ্গা দরজার নিচে চাপা পড়ে আমি সব কষ্ট সহ্য করছিলাম। সুশীল এবং অন্যান্য বন্ধুদের কি হয়েছে দেখার জন্য আমি বহু কষ্টে আমি ভাঙ্গা দরজার নিচ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসলাম। ওরা কোথায়? সারা রুম হন্তদন্ত হয়ে খুঁজে আমি কিছুই পেলাম না। কিভাবে এতো পানি আর পিচ্ছিল পদার্থ এলো আমার রুমে? যেহেতু ধীরে ধীরে আমার জ্ঞান ফিরে আসছিলো আমি বুঝতে পারলাম যে ভারী গুলি বর্ষণ এবং গ্রেনেড চার্জের কারনে ওদের শরীর ঝাঁঝরা/ছিন্নবিন্ন হয়ে গিয়েছে।

ওরা শহীদ…………আমি দাঁড়াবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারছিলাম না, মনে হচ্ছিলো আমার বাম পা শরীর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। আঙ্গুলগুলো অসাড় হয়ে গিয়েছিল। রক্তে এবং ক্ষতে আমার সারা শরীর ভরে গিয়েছিল। আমি আমার গায়ের হাফ হাতার শার্টটি দিয়ে পা কোনমতে মুড়িয়ে ফেললাম।
আর বারুদের শব্দ, গ্রেনেড আর মৃত্যুর আর্তনাদ……..

জন হেস্টিংস এর কিছু কলাম নিউজউইকে ছাপা হয়,সেগুলো ছিল সত্যি হৃদয়বিদারক। হেস্টিংস তার বেশ কিছু কলামে রুমেল এর তথ্যসূত্র ও বক্তব্যও ব্যবহার করেন।
John Hastings, A Methodist missionary worked in Bangladesh for 20 years.
(from Newsweek)

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি তারা সাধারন জনগণের উপরে কি নির্মম অত্যাচার করেছে। রক্ষা পায়নি শিশুও। তারা খেলার ছলে শিশুকে ছুঁড়ে দিয়েছে উপরে,তারপরে তাকে গেঁথেছে রাইফেলের বেয়োনেটে। রক্ষা পায়নি নারীও। তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে নারীকে,তারপর হত্যা করেছে দু পায়ের মাঝে বেয়োনেট গেঁথে।

এছাড়াও নিউজ উইকের আর একটি সংবাদ সবাইকে নাড়িয়ে যায় ভীষণ ভাবে। নীচে সংবাদটির অনুবাদ দেয়া হোল।

Neewsweek

লাল এবং সবুজ ফুলওয়ালা জামা পরা মেয়েটির গল্পে আছে এক আজব বীভৎসতা। সে কারো জন্য ক্ষতির কারন ছিল না। আমি ওর সাথে দেখা করেছিলাম কৃষ্ননগর, বিচলিতভাবে অন্যান্য রোগীদের মাঝে আটকে ছিল, যেখানে এক পাকিস্তানি সৈনিক তার বেয়নেট দিয়ে নির্মমভাবে খুঁচিয়ে ওর গলায় নীল ক্ষতের চিহ্ন বানিয়েছিল সে জায়গাটি হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। “আমি ইসমত আরা, মৃত ইশাক আলীর কন্যা” সে আমাকে ভদ্রতা করে বলছিল।

“আমার বাবা ছিলেন কুষ্টিয়ার একজন ব্যবসায়ী,প্রায় দুই মাস আগে সে বাসা থেকে বের হয় এবং তার দোকানে যায় এবং এরপর আমি আর তাকে দেখিনি। ওই একই রাত্রে আমি বিছানায় যাওয়ার পর চিৎকার এবং তীব্র আর্তনাদ শুনতে পেয়েছিলাম,এবং কি ঘটনা ঘটছে যখন দেখতে গেলাম তখন ওখানে পাঞ্জাবী সৈনিকেরা ছিল। আমার ৪ বোন মেঝেতে মৃত পড়েছিল এবং ওরা যখন আমার মাকে মেরে ফেলছিল তখন সেটা আমি দেখেছিলাম। আমি যখন ওখানে ছিলাম ওরা আমার ভাইকে গুলি করেছিল, সে ছিল বিজ্ঞানে স্নাতক। এরপর একজন সৈনিক আমকে দেখে ফেলে এবং তার ছুরি দিয়ে আমাকে আঘাত করে। আমি মেঝেতে পড়ে গিয়ে মৃতের অভিনয় করি। যখন ওরা চলে গেলো আমি পালিয়ে আসি এবং একজন লোক আমাকে সাইকেলে উঠিয়ে এখানে নিয়ে আসে।

হাসপাতালটি বর্ডার থেকে আধা মাইল দূরে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাতে এবং ইতিমধ্যেই সেটা উত্তেজিত পাকিস্তানিদের শিকার অসহায় মানুষ দ্বারা কানায় কানায় পূর্ন ছিল। সেখানে ছিল পেটে গুলি লাগা সত্ত্বেও বেঁচে যাওয়া ৪ বছরের এক বালক এবং এক মহিলা যে কিনা ক্লান্তভাবে বলে যাচ্ছিলো কিভাবে পাকিস্তানিরা তার দুই সন্তানকেই তারই চোখের সামনে হত্যা করেছে এবং এরপর তাকে গুলি করে যেহেতু তার ছোট বাচ্চাটি তার কোলে ছিল। “গুলিটি বাচ্চার পশ্চাৎদেশ দিয়ে গিয়েছিল এবং এরপর মহিলার বাম বাহুর মধ্য দিয়ে” বলছিলেন ওখানকার চিকিৎসা পরিচালক ডাক্তার আর দত্ত। কিন্তু পুনরায় জ্ঞান ফিরে পেয়ে সে নিজেকে এবং বাচ্চাকে নিয়ে বর্ডারে সরে আসে।

আরেকজন আহত নারী যার পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে গুলিতে ,কোলে বাচ্চাকে নিয়ে দোলাচ্ছিল। সে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সময়ের আগে ই বাচ্চাটিকে জন্ম দেয় এক ধানের ক্ষেতে। তারপরও বাচ্চাটিকে এক হাতে নিয়ে এবং অন্যদের সাথে নিজেকে টেনে নিয়ে এসেছে এই বর্ডারে।
“যদিও আমি জানি এই মানুষগুলোর অবস্থা,আমি অনবরত অবাক হচ্ছি ওদের দৃঢ়তা দেখে” বলছিলেন দত্ত। তারপরও কিছু আছে যারা এখনো মেনে নিতে পারছে না। আমি যেতে যতে দুটো বাচ্চা ছেলেকে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখেছি, ওরা বানরের মত একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ছিল। “রিফিউজিরা বলল ওদের গ্রাম একসপ্তাহ আগে পুড়ে গেছে এবং সেখানে কেউ বেঁচে নেই শুধু এই দুজন ছাড়া। ওরা আমাদের সাথে আছে ৩দিন ধরে অথচ এখনো আমরা জানি না ওরা কারা। ওরা যে দেখেছে তাতে এতোই ভীত-সন্ত্র্বস্ত যে ওদের বাকশক্তি ফুরিয়ে গেছে। ওদেরকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব এবং খাওয়ানো ও বেশ সময়ের ব্যাপার/ কষ্টসাধ্য। এটা বলা কষ্টকর যে কখন ওরা ওদের ভাষা ফিরে পাবে বা আবার স্বাভাবিক জীবনযাপনের সামর্থ্য ফিরে পাবে”

মেজর জেনারেল এস এস উবান এর দেয়া তথ্য থেকে পাক বাহিনীর ভয়াবহ বীভৎসতার প্রমান পাওয়া যায়,সারা বাংলাদেশে তারা অত্যাচার আর নির্মমতার রোলার চালিয়েছে সেটা বুঝতে বাকি থাকে না এক ফোটাও।
মেজর জেনারেল এস এস উবান
Major General SS Uban: Phantoms of Chittagong

২৬শে মার্চ
হাটখোলা রেললাইনের দু পাড়ের বস্তিতে বাসকারী মানুষগুলো কসাই সেনাবাহিনীর চেহারা দেখার আগেই ভারী মেশিনগানের গুলিতে কচুকাঁটা হয়ে যায়।
পুরান ঢাকার নয়াবাজার বস্তিতে একই রকম হামলা হয়,তবে সেখান থেকে দয়া করে যুবতী ও তরুণী মেয়েদের রেহাই দেয়া হয়,যাদের পরবর্তীতে পালাক্রমে ধর্ষণ করে গনকবর দেয়া হয়।

সিলেট-
সিলেট শহরে জারি করা কারফিউয়ের প্রথম প্রদর্শনী দেখা যায়,কারফিউ সম্পর্কে কোন রকম সতর্ক করা হয়নি সিলেটবাসীকে,কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় ব্যরিকেড ও বাঙ্কার বসানো হয়েছিল।
একজন বৃদ্ধ মানুষ বিকেলের দিকে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ফিরছেলেন। পাক সেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করে,এর পর তার সাথের দুই ছেলেকে আদেশ দেয়া হয় তার লাশ নিয়ে যাবার জন্য। দুজন ছেলে যখন লাশের দিকে এগিয়ে যায়,তাদেরকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। এই তিনটি লাশ এরপর প্রদর্শনীর জন্য রাস্তায় ফেলে রাখা হয়,যাতে সামনে কেউ কারফিউ ভঙ্গ না করে।

এছাড়া সিলেটে এক মসজিদে এক কাতারে নামায আদায়রত একদল মুসল্লিকে মেশিন গানের গুলিতে হত্যা করা হয়। বলা হয় এরা সহিহ বা সত্যিকারের মুসলমান নন,তাই মসজিদে নামাজ আদায়ের অধিকার এদের নেই।

সিলেটের মৌলভিবাজার এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহেই লুট হয়ে যায়,আর শহরের মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাম্পে। রাতভর ধর্ষনের পর সেখান থেকে নগ্ন অবস্থায় তাদেরকে একটি মাঠে নিয়ে আসা হয়,এবং নাচতে বাধ্য করা হয়,অবাধ্য মেয়েদের গুলি করা হয়। এর পর তাদেরকে শিবপুর আর্মী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়,এই মেয়েদের কোন খোঁজ পরবর্তীতে আর পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম-
একইদিনে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে হামলা চালানো হয়,পাক বাহিনীর সাথে ছিল বিহারী মুসলমানেরা। মুহূর্তের মধ্যে হত্যা করা হয় ৩০০০ মানুষকে। ধর্ষণ করা হয় প্রতিটি মেয়েকে। অপেক্ষাকৃত সুন্দরী মেয়েগুলোকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাম্পে। বিহারীদের হাতে ছিল রামদা,চাপাতি এবং ড্যাগার।
উদ্ধারকৃত অনেক মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে জানায়,এক সময় পাক সেনাদের ধর্ষণ সহ্য গিয়েছিল,কিন্তু সারা শরীরে আর মুখে ছিটকে পড়া পাক সেনাদের বীর্যর তাপ অসহ্য লাগতো।

৫/৬ এপ্রিলে চট্টগ্রাম একটি পরিত্যক্ত শহরে পরিনত হয়,প্রায় সব বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে,কিছু মেয়েদের হত্যা করা হয়েছে,বাকিরা ক্যাম্পে। নগ্ন ধর্ষিতা মেয়েদের নদীর দিকে মার্চ পাস্ট করানো হয়,সেখানে তাদের হাত পা বেধে গোসল করানো হয়,এবং ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রতিদিন প্রতিটি মেয়েকে গড়ে ১৫-২০ জন সৈন্য ধর্ষন করেছিল।

১লা এপ্রিল
হোলাটি গ্রাম,সাভার
বীভৎস হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারনা হয় এখানে। পাক সেনারা গ্রাম এই হিন্দু গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে,সাথে ছিল ড্যাগার আর চাপাতি হাতে বিহারীরা। পুরো গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়,বাচেনি গরু,ছাগল,কুকুর,বেড়ালও। কিছু মেয়েদের বাচিয়ে রাখা হয় আনন্দের জন্য। মায়ের কোল থেকে বাচ্চাকে টেনে নিয়ে ছুঁড়ে দেয়া হয় তাক করা বেয়োনেটের দিকে।

একটি ছয় বছরের বাচ্চা ‘ জয় বাংলা’ স্লোগান বলে ওঠে আপনমনে। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় পাক বাহিনী। পাক বাহিনীর সদস্যরা বাচ্চাটিকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ৫০ টুকরা করে ফেলে। এবং পোড়ানোর আগে গ্রামের হিন্দুদের সেই মাংশের টুকরো খেতে বাধ্য করা হয়।

জে রুমেল
J. Rummel ” Death By Government, p. 329

পাক সেনাবাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য ছিল,কিশোর ও যুবকদের বিলুপ্ত করা। তরুন ও যুবকদের যেখানে দেখা গেছে গুলী ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর লাশগুলো পড়ে ছিল মাঠে,ইটের ভাটায়,আর্মি ক্যাম্পের আশে পাশে। ভেসে উঠেছিল নদীতে,১৫-২৫ বছরের যুবকদের জন্য সময়টা ছিল বিভীষিকাময়। বাড়ির নারীরাও তাদেরকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। অনেক যুবককে হত্যা করা হয়েছে পালাবার সময়,সীমান্ত এলাকায়। অনেককে ধরে এনেছে বিহারীরা আর্মি ক্যাম্পে।

রবার্ট পেইন
Robert Payne, Massacre [Macmillan, 1973], p. 55

পাক সেনাবাহিনী যে শুধু গনহত্যা চালিয়েছে সেটা বললে ভুল বলা হবে,তারা মৃতদেহের উপর চালিয়েছে পরিক্ষা নিরীক্ষা। বুড়িগঙ্গা নদির পাড়ে যে বদ্ধভুমি আবিষ্কার করা হয়েছে,সেখানে তিনটি আলাদা আলাদা কামরার সন্ধান পাওয়া গেছে,একটি কামরাতে বন্দীদের আটকে রাখা হত,একটি কামরাতে হত্যা করা হত,আর তৃতীয় কামরা থেকে লাশ সরিয়ে ফেলাম ব্যবস্থা করা হত। রাতের পর রাত ধরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে,ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে নদী স্রোতে। কিছু কিছু লাশ জায়গা পেয়েছে গনকবরে।
এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল পাকিস্তান সরকার অধিকৃত তেল কোম্পানির ভবনে,গোডাউনে এবং খোলা আকাশের নিচে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে।

No comments:

Post a Comment